২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির পিলখানা হত্যাকাণ্ডের ঘটনাটি ছিল পরিকল্পিত এবং এর সঙ্গে বহিঃশক্তির সরাসরি সম্পৃক্ততা ছিল। এই বহিঃশক্তির সঙ্গে তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও জড়িত ছিল এবং হত্যাকাণ্ডের পেছনে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ (সবুজ সংকেত) ছিল।
পিলখানা হত্যাকাণ্ডের তদন্তে গঠিত ‘জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের’ প্রতিবেদনে এমন সব চাঞ্চল্যকর ও গুরুতর তথ্য উঠে এসেছে।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অব.) আ ল ম ফজলুর রহমান প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন দাখিল করেন।
প্রতিবেদনের মূল ফাইন্ডিংস ও গুরুতর অভিযোগ
কমিশনের প্রতিবেদন এবং কমিশন প্রধান ও সদস্যদের বক্তব্য অনুযায়ী উঠে আসা মূল তথ্যগুলো হলো: হত্যাকাণ্ডটি ছিল পরিকল্পিত। এর পেছনে প্রধান সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেন তৎকালীন সংসদ-সদস্য এবং পরবর্তী সময়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র শেখ ফজলে নূর তাপস ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সরাসরি জড়িত থাকার শক্তিশালী প্রমাণ মিলেছে। পুরো ঘটনাটি সংঘটিত করার ক্ষেত্রে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ‘গ্রিন সিগন্যাল’ ছিল। এছাড়া ঘটনার দায় তৎকালীন সেনাপ্রধান জেনারেল মইন ইউ আহমেদেরও ছিল। হত্যার পর ঘটনায় জড়িতদের রক্ষা করতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা ভূমিকা পালন করেন। ঘটনার পরপরই ২০-২৫ জনের একটি মিছিল পিলখানায় প্রবেশ করলেও, বের হওয়ার সময় সেই মিছিলে দুই শতাধিক মানুষ ছিল। কেন সেনাবাহিনী দাঁড়িয়ে থাকল এবং কোনো অ্যাকশন নিল না, সেটিও রহস্যময় বলে তদন্তে উঠে এসেছে।
ঘটনায় পুলিশ, র্যাব এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর চরম ব্যর্থতা ছিল। এছাড়া কিছু প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া এবং কয়েকজন সাংবাদিকের ভূমিকা ছিল অপেশাদার। বহু আলামত ধ্বংস হয়ে গেছে এবং ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত অনেকে বিদেশে চলে গেছেন।
প্রতিবেদন দাখিলের পর কমিশনপ্রধান ফজলুর রহমান বলেন, এই তদন্তের মাধ্যমে বিডিআর হত্যাকাণ্ড নিয়ে জনমনে থাকা প্রতিটি প্রশ্নের উত্তর খোঁজা হয়েছে। ১৬ বছর আগের ঘটনা হওয়ায় বহু আলামত ধ্বংস হয়ে গেলেও, তারা সাক্ষ্য এবং পূর্বের তদন্ত রিপোর্ট সংগ্রহ করে সর্বোচ্চ পেশাদারি বজায় রেখে তদন্ত কাজ শেষ করেছেন।
প্রতিবেদন গ্রহণ করে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, “বিডিআর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সমগ্র জাতি দীর্ঘদিন অন্ধকারে ছিল। ইতিহাসের এ ভয়াবহতম ঘটনা নিয়ে জাতির অনেক প্রশ্ন ছিল। ফলে এই কাজের মধ্য দিয়ে সেসব প্রশ্নের অবসান ঘটবে।” তিনি এই প্রতিবেদনকে জাতির জন্য মূল্যবান সম্পদ হিসেবে অভিহিত করেন।
উল্লেখ্য, ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি পিলখানায় বিদ্রোহের হামলায় ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ মোট ৭৪ জন নিহত হন। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর নিহতদের স্বজনরা শেখ হাসিনা, মইন ইউ আহমেদসহ ৫৮ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দায়ের করার পর সরকার এই তদন্ত কমিটি গঠন করে।
০৮:৪৮ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম:
পরিকল্পিত গণহত্যা: পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে শেখ হাসিনা,
-
নিউজ ডেস্ক - আপডেট: ০৮:৪৭:২৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১ ডিসেম্বর ২০২৫
- ৫০৮
সর্বাধিক পঠিত










