১০:১২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২১ নভেম্বর ২০২৫

কাজে আসছে না অধিকাংশ ঘর: মুজিববর্ষের ঘরে ‘লুটপাটের মচ্ছব’

  • সেন্ট্রাল ডেস্ক নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ১১:৪২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৪৫

মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে সারা দেশে দেওয়া আড়াই লাখ ঘরের অধিকাংশ এখন ফাঁকা পড়ে আছে বা বসবাসের অনুপযোগী। ঘর নির্মাণের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গরিবের উপকারে না আসা এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।💸 অর্থ লোপাট ও নিম্নমানের কাজ
২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার দফায় সারা দেশে এই ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ধাপে ঘর নির্মাণের অর্থ লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ:
* বরাদ্দের অর্ধেক অর্থে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরি করা হয়েছে।
* স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতারা এই লুটপাটের ভাগিদার হয়েছেন।
* নিম্নমানের কাজের কারণে মাত্র তিন বছরেই এসব ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে— দেওয়াল ফেটে গেছে, টিনের চাল উড়ে গেছে এবং অনেক স্থাপনা নির্মাণের পরপরই ধসে গেছে।
বিভিন্ন পর্যায়ের ঘরের ব্যয় ছিল:
* প্রথম পর্যায়: $১,৭১,০০০ টাকা
* দ্বিতীয় পর্যায়: $১,৯০,০০০ টাকা
* তৃতীয় পর্যায়: $২,৬৪,৫০০ টাকা
* চতুর্থ পর্যায়: $৩,০৫,০০০ টাকা
সচ্ছলদের বরাদ্দ ও ঘর বিক্রি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘরগুলো গরিবদের বদলে খুঁজে খুঁজে স্থানীয় প্রতিনিধিদের স্বজন ও আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
* এর ফলে, অনেক ঘর উদ্বোধনের পর থেকেই তালাবদ্ধ হয়ে আছে।
* টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের বাসারচর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৯৩টি ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘর ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছেন সুবিধাভোগীরা।
* চিলাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৯টি ঘরের মধ্যে ১৬টি ঘরও বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
* স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সচ্ছলদের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে তা গরিবের কাছে বিক্রি করেছেন।
অব্যবস্থাপনা ও ভোগান্তি
সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ঘরে কেউ থাকতে পারছেন না এবং অনেক প্রকল্পের করুণ দশা:
* জমির মালিকানা সমস্যা: বাউফলের মতো অনেক এলাকায় ব্যক্তির জমিতে প্রভাব খাটিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, এখন জমির মালিকরা গাছপালা লাগাতেও বাধা দিচ্ছেন।
* ফাঁকা ও মাদকসেবীদের আস্তানা: ঘরগুলোর অধিকাংশই এখন ফাঁকা। টাঙ্গাইল এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ১৪৬টি ঘরের মধ্যে ১২৬টিই ফাঁকা পড়ে আছে। সন্ধ্যা নামলেই এসব আশ্রয়ণ প্রকল্প মাদকসেবী ও সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়।
* বিক্রি ও চুরি: অনেক ঘরের টিন, রড ও ইট খুলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
* অসুবিধা: সরিষাবাড়ীর উপকারভোগীরা কর্মসংস্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবের কথা জানিয়েছেন।
* নদী ভাঙন: আলফাডাঙ্গার চাপুলিয়া গ্রামে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ১৩০টি ঘরের মধ্যে গত দুই বছরে প্রায় ১০০টি ঘর মধুমতি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া জানান, গত জুন মাসে প্রকল্পটি সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্প ঘিরে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সর্বাধিক পঠিত

ধানের শীষের প্রার্থীর বিরুদ্ধাচরণ: ঝিকরগাছা উপজেলা ছাত্রদলের দুই নেতাকে শোকজ করলো কেন্দ্রীয় কমিটি

কাজে আসছে না অধিকাংশ ঘর: মুজিববর্ষের ঘরে ‘লুটপাটের মচ্ছব’

আপডেট: ১১:৪২:২৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে সারা দেশে দেওয়া আড়াই লাখ ঘরের অধিকাংশ এখন ফাঁকা পড়ে আছে বা বসবাসের অনুপযোগী। ঘর নির্মাণের নামে কয়েক হাজার কোটি টাকা লুটপাটের আয়োজন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গরিবের উপকারে না আসা এই প্রকল্পটি ইতোমধ্যে সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।💸 অর্থ লোপাট ও নিম্নমানের কাজ
২০২০ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত চার দফায় সারা দেশে এই ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়। প্রতিটি ধাপে ঘর নির্মাণের অর্থ লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগ:
* বরাদ্দের অর্ধেক অর্থে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে ঘর তৈরি করা হয়েছে।
* স্থানীয় প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতারা এই লুটপাটের ভাগিদার হয়েছেন।
* নিম্নমানের কাজের কারণে মাত্র তিন বছরেই এসব ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে— দেওয়াল ফেটে গেছে, টিনের চাল উড়ে গেছে এবং অনেক স্থাপনা নির্মাণের পরপরই ধসে গেছে।
বিভিন্ন পর্যায়ের ঘরের ব্যয় ছিল:
* প্রথম পর্যায়: $১,৭১,০০০ টাকা
* দ্বিতীয় পর্যায়: $১,৯০,০০০ টাকা
* তৃতীয় পর্যায়: $২,৬৪,৫০০ টাকা
* চতুর্থ পর্যায়: $৩,০৫,০০০ টাকা
সচ্ছলদের বরাদ্দ ও ঘর বিক্রি
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এই ঘরগুলো গরিবদের বদলে খুঁজে খুঁজে স্থানীয় প্রতিনিধিদের স্বজন ও আওয়ামী লীগ ঘরানার ব্যক্তিদের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
* এর ফলে, অনেক ঘর উদ্বোধনের পর থেকেই তালাবদ্ধ হয়ে আছে।
* টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দাইন্যা ইউনিয়নের বাসারচর আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৯৩টি ঘরের মধ্যে ১৫টি ঘর ১০ হাজার থেকে ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি করে অন্যত্র চলে গেছেন সুবিধাভোগীরা।
* চিলাবাড়ী আশ্রয়ণ প্রকল্পের ৪৯টি ঘরের মধ্যে ১৬টি ঘরও বিক্রি করা হয়েছে বলে অভিযোগ।
* স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা সচ্ছলদের নামে ঘর বরাদ্দ নিয়ে তা গরিবের কাছে বিক্রি করেছেন।
অব্যবস্থাপনা ও ভোগান্তি
সরেজমিন প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, অনেক ঘরে কেউ থাকতে পারছেন না এবং অনেক প্রকল্পের করুণ দশা:
* জমির মালিকানা সমস্যা: বাউফলের মতো অনেক এলাকায় ব্যক্তির জমিতে প্রভাব খাটিয়ে ঘর নির্মাণ করা হয়েছে, এখন জমির মালিকরা গাছপালা লাগাতেও বাধা দিচ্ছেন।
* ফাঁকা ও মাদকসেবীদের আস্তানা: ঘরগুলোর অধিকাংশই এখন ফাঁকা। টাঙ্গাইল এবং জামালপুরের সরিষাবাড়ীর ১৪৬টি ঘরের মধ্যে ১২৬টিই ফাঁকা পড়ে আছে। সন্ধ্যা নামলেই এসব আশ্রয়ণ প্রকল্প মাদকসেবী ও সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়।
* বিক্রি ও চুরি: অনেক ঘরের টিন, রড ও ইট খুলে বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।
* অসুবিধা: সরিষাবাড়ীর উপকারভোগীরা কর্মসংস্থান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অভাবের কথা জানিয়েছেন।
* নদী ভাঙন: আলফাডাঙ্গার চাপুলিয়া গ্রামে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে তোলা ১৩০টি ঘরের মধ্যে গত দুই বছরে প্রায় ১০০টি ঘর মধুমতি নদীর ভাঙনে বিলীন হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে প্রধান উপদেষ্টার মুখ্যসচিব এম সিরাজ উদ্দিন মিয়া জানান, গত জুন মাসে প্রকল্পটি সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্প ঘিরে কেউ অনিয়ম-দুর্নীতি করে থাকলে অবশ্যই সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।