আজ মহান বিজয় দিবস, বাঙালি জাতির আত্ম-মুক্তির দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি শাসন-শোষণ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে বাংলাদেশ। ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে ফ্যাসিবাদী শাসনের অবসানের পর এবার দ্বিতীয়বারের মতো স্বাধীন ও মুক্ত পরিবেশে এই জাতীয় দিবসটি উদ্যাপিত হচ্ছে।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন এবং আহত হয়েছেন, তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে একটি বৈষম্যহীন নতুন বাংলাদেশ গড়ার যে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, তার ধারাবাহিকতায় আগামী বছর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচন। সেই নির্বাচনের মাধ্যমে **’নতুন বাংলাদেশের শুভ সূচনা’**র প্রত্যাশা নিয়েই এবার উদ্যাপিত হচ্ছে বিজয়ের বার্ষিকী।
বিজয় দিবসে গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করা হচ্ছে মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের। এই দিনে বৈষম্যহীন ও গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকারে ছাত্র-জনতা আবারও শপথ নেবে। ১৯৭১ সালে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশকে অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক চেতনায় গড়ে তোলার যে স্বপ্ন ছিল, তা নানা রাজনৈতিক সংকট, দুর্নীতি ও সহিংসতার কারণে পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে ৫ আগস্টের পর গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বৈষম্যমুক্ত নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে একগুচ্ছ সংস্কার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। একইসঙ্গে সব রাজনৈতিক দল জুলাই জাতীয় সনদে স্বাক্ষর করেছে।
আগামী ১২ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর ইতোমধ্যে দেশজুড়ে নির্বাচনী আমেজ তৈরি হয়েছে, সেই আবহেই উদ্যাপিত হচ্ছে এবারের বিজয় দিবস।
পাকিস্তানি বাহিনীর আত্মসমর্পণের স্মরণে দিনটি শুরু হবে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে। সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে প্রথমে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন এবং পরে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এরপর মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা শ্রদ্ধা জানাবেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, বিদেশি কূটনীতিক এবং সর্বস্তরের মানুষ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
দিবসটি উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতারাও বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
বর্ণিল আয়োজন ও বিশ্বরেকর্ড প্রচেষ্টা
জাতীয়ভাবে বিজয় দিবস উদ্যাপনের অংশ হিসেবে এবার সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিংয়ের মাধ্যমে বিশ্বরেকর্ড গড়ার আয়োজন করা হয়েছে।
* সকাল ১১টা থেকে তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী ও বিমানবাহিনীর ফ্লাই-পাস্ট প্রদর্শনী এবং বিশেষ বিজয় দিবস ব্যান্ড শো অনুষ্ঠিত হবে।
* সকাল ১১টা ৪০ মিনিট থেকে ‘টিম বাংলাদেশ’-এর ৫৪ জন প্যারাট্রুপার দেশের স্বাধীনতার ৫৪ বছর উপলক্ষে পতাকাবাহী স্কাইডাইভ প্রদর্শন করবেন। এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ পতাকা-প্যারাশুটিং প্রদর্শনী হিসেবে বিবেচিত হবে।
* দেশের অন্যান্য শহরেও সশস্ত্র বাহিনীর ফ্লাই-পাস্ট ও বিভিন্ন বাহিনীর ব্যান্ড শো অনুষ্ঠিত হবে।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও মেলা
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়েছে।
* জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় শিশুদের জন্য মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকবে।
* সকাল ৯টায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে।
* আজ বিকাল ৩টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিজয় দিবসের গান পরিবেশিত হবে।
* একই সময়ে নতুন প্রজন্মের শিল্পীরা দেশের ৬৪ জেলায় একযোগে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের গান পরিবেশন করবেন।
* বিভিন্ন সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক আলোচনা, চিত্রাঙ্কন ও রচনা প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছে।
অন্যান্য ব্যবস্থা
বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারি, আধা-সরকারি ও বেসরকারি ভবনসহ বিদেশে অবস্থিত দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন ও আলোকসজ্জা করা হয়েছে। ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন শহরের প্রধান সড়ক ও সড়কদ্বীপগুলো সজ্জিত করা হয়েছে।
এছাড়া:
* বিকালে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেবেন।
* বাংলাদেশ ডাক বিভাগ স্মারক ডাকটিকিট প্রকাশ করবে।
* বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতারসহ বেসরকারি চ্যানেলগুলো বিশেষ অনুষ্ঠান সম্প্রচার করবে।
* হাসপাতাল, কারাগার ও এতিমখানাগুলোতে উন্নতমানের খাবার পরিবেশন করা হবে।
* চট্টগ্রাম, খুলনা, মংলা ও পায়রা বন্দরসহ বিভিন্ন নৌঘাটে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্ট গার্ডের জাহাজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
০১:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম:
নতুন বাংলাদেশের প্রত্যাশায় আজ মহান বিজয় দিবস
-
নিউজ ডেস্ক - আপডেট: ০৬:৩২:২৫ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
- ৫১০
সর্বাধিক পঠিত




















