০৮:৫৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫

কানাডার ভুয়া ভিসায় প্রতারণা: ঝিকরগাছার দুই যুবকের কাছ থেকে ৩৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল দম্পতি

  • সেন্ট্রাল ডেস্ক নিউজ ডেস্ক
  • আপডেট: ০২:৩৩:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫৩০

কানাডায় লোভনীয় বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার এক দম্পতি দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। ঝিকরগাছার কালিয়ানী গ্রামের দুই যুবককে ভুয়া কানাডার ভিসা দিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্তরা। জমিজমা বিক্রি ও বন্ধক রেখে নিঃস্ব হওয়া ভুক্তভোগীরা এখন বিচারের আশায় পথে পথে ঘুরছেন।
ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা
* ভুক্তভোগী: আলসাবা রাতুল (আবু সায়েম’র ছেলে) এবং শাকিল হোসেন (হাবিবুর রহমানের ছেলে), উভয়ই ঝিকরগাছা উপজেলার কালিয়ানী গ্রামের বাসিন্দা।
* অভিযুক্ত দালাল: নাসির উদ্দিন আলতাফ ও তার স্ত্রী শাহানাজ বেগম। তারা একই গ্রামের মৃত আবু তালেব মোড়লের ছেলে।
যেভাবে ঘটলো প্রতারণা
* অর্থ গ্রহণ: অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন আলতাফ ও শাহানাজ বেগম লোভনীয় চাকরির আশ্বাস দিয়ে দুই যুবকের কাছ থেকে মোট ৩৮ লাখ টাকা চুক্তি করেন। এই অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (ইসলামী ব্যাংক) ও হাতে হাতে নেওয়া হয়।
* নেপালে আটকে রাখা: ভুক্তভোগী আলসাবা রাতুল জানান, দালাল আলতাফ প্রথমে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তাদের নেপালে নিয়ে যান। সেখানে একটি ভুয়া অ্যাম্বাসি অফিসে ইন্টারভিউয়ের নাটক সাজানো হয়। দ্বিতীয়বার নেপালে গিয়ে তাদের একটি হোটেলে দুই মাস আটকে রেখে বাড়িতে ফোন করিয়ে চুক্তি বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত এক লাখ করে টাকা আদায় করা হয়।
* ভুয়া ভিসা ও পলায়ন: অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার পর তাদের হাতে কানাডার ভিসাসংযুক্ত পাসপোর্ট তুলে দেওয়া হয়। পাসপোর্ট হাতে দিয়েই দালাল নাসির উদ্দিন আলতাফ কুয়েতে পালিয়ে যান।
* ভিসা যাচাই: দেশে ফিরে ভুক্তভোগীরা অনলাইনে যাচাই করে দেখেন, তাদের হাতে দেওয়া কানাডার ভিসাটি সম্পূর্ণ ভুয়া।
ভুক্তভোগীদের দাবি


* আলসাবা রাতুলের বাবা আবু সায়েম: তিনি সুদের ওপর টাকা নিয়ে এবং জমি বন্ধক রেখে ছেলেকে পাঠানোর জন্য ১৯ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। সুদের টাকা দিতে দিতে তিনি এখন নিঃস্ব এবং বছরে পাঁচ লাখ টাকা সুদ গুনতে হচ্ছে।
* শাকিল হোসেনের বাবা হাবিবুর রহমান: তিনি তার আপন ফুফাতো ভাই আলতাফের কথায় বিশ্বাস করে দোকানপাট, জমি-জমা, গরু-ছাগল সব বিক্রি করে ১৯ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনি এই প্রতারণার বিচার দাবি করেছেন।
দালাল ও পুলিশের বক্তব্য
* দালাল নাসির উদ্দিন আলতাফ (কালবেলাকে): তিনি দাবি করেন, ভিসাটি ভুয়া ছিল না, “সঠিক ছিল।” তিনি বলেন, “তারা গ্রামের মূর্খ মানুষ, পড়াশুনো যানে না। তারা ভিসার কি বুঝে।” ৩৮ লাখ টাকার বিষয়ে তিনি সরাসরি স্বীকার না করে বলেন, দুইজনকে পাঠানোর জন্য আনুমানিক “২০ লাখের মতো টাকা” নিয়েছেন এবং এখনো টাকার হিসাব করা হয়নি।
* ঝিকরগাছা থানার ওসি নূর মোহাম্মদ গাজী: তিনি জানান, কানাডায় পাঠানোর নামে ভুয়া ভিসা দেওয়ার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, মানব পাচার চক্রের সদস্যরা গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে টার্গেট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।

সর্বাধিক পঠিত

পরিকল্পিত গণহত্যা: পিলখানা হত্যাকাণ্ডের নেপথ্যে শেখ হাসিনা,

কানাডার ভুয়া ভিসায় প্রতারণা: ঝিকরগাছার দুই যুবকের কাছ থেকে ৩৮ লাখ টাকা হাতিয়ে নিল দম্পতি

আপডেট: ০২:৩৩:০৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৫

কানাডায় লোভনীয় বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার এক দম্পতি দালাল চক্রের বিরুদ্ধে। ঝিকরগাছার কালিয়ানী গ্রামের দুই যুবককে ভুয়া কানাডার ভিসা দিয়ে তাদের কাছ থেকে প্রায় ৩৮ লাখ টাকা নিয়ে পালিয়েছেন অভিযুক্তরা। জমিজমা বিক্রি ও বন্ধক রেখে নিঃস্ব হওয়া ভুক্তভোগীরা এখন বিচারের আশায় পথে পথে ঘুরছেন।
ভুক্তভোগী ও অভিযুক্তরা
* ভুক্তভোগী: আলসাবা রাতুল (আবু সায়েম’র ছেলে) এবং শাকিল হোসেন (হাবিবুর রহমানের ছেলে), উভয়ই ঝিকরগাছা উপজেলার কালিয়ানী গ্রামের বাসিন্দা।
* অভিযুক্ত দালাল: নাসির উদ্দিন আলতাফ ও তার স্ত্রী শাহানাজ বেগম। তারা একই গ্রামের মৃত আবু তালেব মোড়লের ছেলে।
যেভাবে ঘটলো প্রতারণা
* অর্থ গ্রহণ: অভিযুক্ত নাসির উদ্দিন আলতাফ ও শাহানাজ বেগম লোভনীয় চাকরির আশ্বাস দিয়ে দুই যুবকের কাছ থেকে মোট ৩৮ লাখ টাকা চুক্তি করেন। এই অর্থ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট (ইসলামী ব্যাংক) ও হাতে হাতে নেওয়া হয়।
* নেপালে আটকে রাখা: ভুক্তভোগী আলসাবা রাতুল জানান, দালাল আলতাফ প্রথমে ২০২৪ সালের মার্চ মাসে তাদের নেপালে নিয়ে যান। সেখানে একটি ভুয়া অ্যাম্বাসি অফিসে ইন্টারভিউয়ের নাটক সাজানো হয়। দ্বিতীয়বার নেপালে গিয়ে তাদের একটি হোটেলে দুই মাস আটকে রেখে বাড়িতে ফোন করিয়ে চুক্তি বহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত এক লাখ করে টাকা আদায় করা হয়।
* ভুয়া ভিসা ও পলায়ন: অতিরিক্ত অর্থ নেওয়ার পর তাদের হাতে কানাডার ভিসাসংযুক্ত পাসপোর্ট তুলে দেওয়া হয়। পাসপোর্ট হাতে দিয়েই দালাল নাসির উদ্দিন আলতাফ কুয়েতে পালিয়ে যান।
* ভিসা যাচাই: দেশে ফিরে ভুক্তভোগীরা অনলাইনে যাচাই করে দেখেন, তাদের হাতে দেওয়া কানাডার ভিসাটি সম্পূর্ণ ভুয়া।
ভুক্তভোগীদের দাবি


* আলসাবা রাতুলের বাবা আবু সায়েম: তিনি সুদের ওপর টাকা নিয়ে এবং জমি বন্ধক রেখে ছেলেকে পাঠানোর জন্য ১৯ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। সুদের টাকা দিতে দিতে তিনি এখন নিঃস্ব এবং বছরে পাঁচ লাখ টাকা সুদ গুনতে হচ্ছে।
* শাকিল হোসেনের বাবা হাবিবুর রহমান: তিনি তার আপন ফুফাতো ভাই আলতাফের কথায় বিশ্বাস করে দোকানপাট, জমি-জমা, গরু-ছাগল সব বিক্রি করে ১৯ লাখ টাকা দিয়েছেন। তিনি এই প্রতারণার বিচার দাবি করেছেন।
দালাল ও পুলিশের বক্তব্য
* দালাল নাসির উদ্দিন আলতাফ (কালবেলাকে): তিনি দাবি করেন, ভিসাটি ভুয়া ছিল না, “সঠিক ছিল।” তিনি বলেন, “তারা গ্রামের মূর্খ মানুষ, পড়াশুনো যানে না। তারা ভিসার কি বুঝে।” ৩৮ লাখ টাকার বিষয়ে তিনি সরাসরি স্বীকার না করে বলেন, দুইজনকে পাঠানোর জন্য আনুমানিক “২০ লাখের মতো টাকা” নিয়েছেন এবং এখনো টাকার হিসাব করা হয়নি।
* ঝিকরগাছা থানার ওসি নূর মোহাম্মদ গাজী: তিনি জানান, কানাডায় পাঠানোর নামে ভুয়া ভিসা দেওয়ার একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছেন এবং পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, মানব পাচার চক্রের সদস্যরা গ্রামের সহজ-সরল মানুষকে টার্গেট করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।