যশোরের আলোচিত অস্ত্র চোরাকারবারি নাসির উদ্দীন ওরফে ‘গোল্ড নাসির’কে খালাস দিয়েছে আদালত। ২০২৩ সালে ৬টি অস্ত্র, ১৯ রাউন্ড গুলি ও খালি ম্যাগাজিনসহ র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া সত্ত্বেও আদালতের রায়ে তিনি মুক্তি পান। এ ঘটনায় আদালতপাড়ায় সৃষ্টি হয়েছে তীব্র আলোচনার ঝড়, পাশাপাশি জনমনে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ ও অসন্তোষ।
রায়ের ব্যাখ্যায় আদালত জানায়, সাক্ষীদের দুর্বলতা ও আইনগত ত্রুটির কারণে অভিযোগ প্রমাণ করা যায়নি। তবে সিনিয়র আইনজীবীদের একাংশের মতে, এখানে আইনের ভুল ব্যাখ্যা করা হয়েছে এবং নেপথ্যে রয়েছে যোগসাজশ। মামলার নথি গোপনীয়তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্ট পেশকার একেক সময় ভিন্ন তথ্য দেওয়ায় বিষয়টি আরও রহস্য ঘনীভূত হয়েছে।
জানা যায়, ২০২৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর শার্শার বাগআঁচড়া মার্কেট এলাকা থেকে র্যাব অভিযান চালিয়ে গোল্ড নাসিরকে আটক করে। র্যাবের ডিএডি শেখ নুরুজ্জামান চানু এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন এবং তদন্ত শেষে চার্জশিট জমা দেওয়া হয়। মামলায় মোট নয়জন সাক্ষ্য দেন, যার মধ্যে র্যাব সদস্যরা অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনা স্পষ্টভাবে বর্ণনা করলেও স্থানীয় সাক্ষীরা অস্বীকৃতি জানান। বিচারক তার রায়ে বলেন, পাবলিক সাক্ষীর স্বাক্ষ্য না থাকায় এবং অস্ত্র উদ্ধারের প্রক্রিয়ায় আইনগত ত্রুটি থাকায় অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। ফলে নাসির খালাস পান এবং তার কাছ থেকে জব্দ করা নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন ফেরত দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়।
আইন বিশেষজ্ঞদের মতে, ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী র্যাব কর্মকর্তারাই বৈধভাবে অস্ত্র উদ্ধার করতে পারেন এবং সরকারি সাক্ষীদের স্বাক্ষ্যের ভিত্তিতেও সাজা দেওয়া সম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সাক্ষীর উপর নির্ভর করে খালাস দেওয়া হয়েছে, যা অস্বাভাবিক। জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের নেতারা মনে করেন, আলোচিত আসামি খালাস পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিঘ্নিত হতে পারে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙে পড়বে।
অতিরিক্ত পিপি আকরাম হোসেন দাবি করেন, সাক্ষীদের দুর্বলতার কারণে নাসির খালাস পেয়েছেন। তবে যশোর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু ইতিমধ্যে উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন। তিনি আশাবাদী, আপিল আদালতে রায় বাতিল হবে।
এদিকে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির নেতারা জানিয়েছেন, মামলায় যদি অনৈতিক প্রভাব প্রমাণিত হয়, সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
–











