যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন ও দ্বিতীয় বিয়ের তথ্য গোপন করার অভিযোগে খুলনা আরআরএফ-এ কর্মরত এক পুলিশ কনস্টেবলের বাড়িতে শিশু সন্তানকে নিয়ে আমরণ অনশন করেছেন তার স্ত্রী। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে টাঙ্গাইল থেকে এসে যশোর সদর উপজেলার বাহাদুরপুর গ্রামে শ্বশুরবাড়ির সামনে এই অনশন শুরু করেন শারমিন আক্তার নামের ওই গৃহবধূ। তার এই অবস্থানে এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
অনশন ও শাশুড়ির পলায়ন
বৃহস্পতিবার সকালে শারমিন তার শিশু সন্তানকে নিয়ে বাহাদুরপুর গ্রামের রফিক উদ্দিনের ছেলে পুলিশ কনস্টেবল সাদমান হোসেন রাকিবের বাড়িতে পৌঁছালে পরিস্থিতি জটিল হয়। শারমিনকে দেখেই সাদমানের মা বাড়িতে তালা লাগিয়ে অন্যত্র চলে যান। এতে শারমিন ক্ষুব্ধ হয়ে আমরণ অনশনের ঘোষণা দেন। পরে স্থানীয়দের হস্তক্ষেপে শাশুড়িকে ডেকে আনা হয়। স্থানীয়রা দুই পক্ষের সঙ্গে কথা বলে আইনি প্রক্রিয়া ও মীমাংসার আশ্বাস দিলে বিকেলে শারমিন তার শিশু সন্তানকে নিয়ে গ্রাম ত্যাগ করেন।
শারমিন অভিযোগ করেন, অনশন চলাকালীন সময়ে শ্বশুরবাড়ির পক্ষ থেকে তিনি ও তার শিশু সন্তানের সঙ্গে অত্যন্ত খারাপ ব্যবহার করা হয়েছে।
শারমিনের অভিযোগ: প্রেম, বিয়ে, যৌতুক ও প্রতারণা
শারমিন আক্তারের দাবি অনুযায়ী, ২০১৭ সালে ফেসবুকের মাধ্যমে বেকার থাকা অবস্থায় সাদমান হোসেন রাকিবের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। পরে সাদমান খুলনা আরআরএফ-এ কনস্টেবল পদে চাকরি পেলে ২০২২ সালে তারা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বিয়ের সময় শারমিনের পরিবার সাদমানকে সোনা ও আসবাবপত্রসহ প্রায় ছয় লাখ টাকার মালামাল উপহার দেন।
চাকরির কারণে সাদমান শারমিনকে নিয়ে কুষ্টিয়া এবং পরে চুয়াডাঙ্গা জেলায় বাসা ভাড়া করে সংসার শুরু করেন। এর মাঝেই শারমিন অন্তঃসত্ত্বা হন। কিন্তু গর্ভে সাত মাসের সন্তান থাকা অবস্থায় তিনি জানতে পারেন, সাদমান এর আগেও বিয়ে করেছেন এবং সেই তথ্য গোপন রেখেই তিনি শারমিনকে বিয়ে করেন। এই প্রতারণা জানার পরই তাদের সম্পর্কে টানাপোড়েন শুরু হয় এবং এক পর্যায়ে শারমিন অসুস্থ হয়ে টাঙ্গাইলের উফুলকি গ্রামে বাবার বাড়িতে চলে যান।
যৌতুক দাবি ও নির্যাতনের অভিযোগ
শারমিনের অভিযোগ, তাদের ছেলে সন্তানের জন্ম হওয়ার পর সাদমান তার কাছে পাঁচ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেন। টাকা দিতে না পারায় সাদমান বিভিন্নভাবে নির্যাতন শুরু করেন এবং পরবর্তীতে শারমিন ও তার সন্তানের সঙ্গে যোগাযোগ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন।
চলতি বছরের ১৭ এপ্রিল সাদমান টাঙ্গাইলে গেলেও যৌতুক ছাড়া শারমিন ও তার সন্তানকে ঘরে তুলবেন না বলে জানিয়ে চলে আসেন। এরপর থেকেই শারমিন ন্যায়বিচারের জন্য দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
মামলা ও পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ
শারমিন টাঙ্গাইলের আদালতে সাদমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। তবে স্বামী পুলিশ সদস্য হওয়ায় কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে তার অভিযোগ। সব প্রমাণপত্র নিয়ে তিনি খুলনা ডিআইজি অফিসেও অভিযোগ জানিয়েছেন। ডিআইজি বিষয়টি তদন্তের নির্দেশ দিলেও স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ শারমিনের। উল্টো মামলা ও অভিযোগ করায় সাদমান বিভিন্নভাবে তাকে হুমকি দিচ্ছেন।
অন্যদিকে, সন্তানের ভরণপোষণ চালাতে হিমশিম খাচ্ছে শারমিনের পরিবার। কোনো উপায় না পেয়ে অবশেষে তিনি শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে অনশনে বসেন।
পুলিশ সদস্যের বক্তব্য: তালাক ও তদন্ত
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ কনস্টেবল সাদমান হোসেন রাকিব স্বীকার করেন যে শারমিন তার স্ত্রী ছিলেন এবং শিশুটি তারই সন্তান। তবে তিনি জানান, তিন মাস আগেই শারমিনকে তালাক দেওয়া হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, শারমিন আদালতে মামলা করেছেন এবং রেঞ্জ অফিসে অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। সাদমান স্পষ্ট জানিয়ে দেন যে বিষয়টি আদালতের মাধ্যমেই মীমাংসা হবে, তবে তিনি শারমিনকে আর ঘরে তুলবেন না।
০৭:০১ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫
শিরোনাম:
যশোর যৌতুক ও প্রতারণার অভিযোগ: পুলিশ সদস্যের বাড়িতে শিশু সন্তান নিয়ে গৃহবধূর অনশন, এলাকায় চাঞ্চল্য
-
নিউজ ডেস্ক - আপডেট: ০৭:৪২:৪৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৫
- ৫১২
সর্বাধিক পঠিত














